এটি একপ্রকার রশ্মি যার রঙ নীল। এটিকে হাই এনার্জি ভিসিবল লাইটও বলা হয়। ব্লু লাইটের রেডিয়েশন দৈর্ঘ্য কম কিন্তু এর শক্তি অনেক বেশি। আমাদের আশপাশে থাকা সমস্ত ডিজিটাল ডিভাইস থেকেই এই নীল আলো নির্গত হয় যার অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এটি আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোর যে ২৪ ঘণ্টার একটা শরীরচক্র Circadian Rhythm আছে সেটার ব্যাঘাত ঘটায়। শুধু তাই নয়, এর কারণে সাধারণ চক্ষু অবসাদ বা Eye Strain থেকে শুরু করে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এই নীল আলো স্লিপিং হরমোন মেলাটোনিন এর ক্ষরণ কমিয়ে দিয়ে আমাদের রাতে জাগিয়ে রাখে। অর্থাৎ এটি মানবদেহের স্লিপ হরমোন মেলাটোনিনকে ব্লক করে দেয়। তাই দিনেরবেলা সূর্য থেকে প্রচুর পরিমাণে নীল আলো এসে আমাদের চোখে ঢুকলেও তা আমাদের শারীরবৃত্তীয় চক্রের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু রাতেরবেলা নীল আলোর প্রভাব আমাদের ঘুমাতে বাধা দেয় যা দীর্ঘমেয়াদে ইনসমনিয়া রোগের জন্ম দিতে পারে। তাই আধুনিকায়নের এই বর্তমান সময়ে যুগোপযোগী হলো অ্যান্টি ব্লু লাইট।
অ্যান্টি ব্লু লাইট কি?
অ্যান্টি ব্লু লাইট হলো এমন একটি ডিভাইস যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন এসব ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ( যেমন; মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, কম্পিউটার ইত্যাদি) ক্ষতিকর নীল আলো থেকে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি। এটি স্ক্রিন গ্লাস, ব্লু লাইট ফিল্টারিং গ্লাস বা গেমিং গ্লাস নামেও পরিচিত। বর্তমানে চশমার লেন্সে এটি নীল আলোর পরিমাণ ফিল্টার করার জন্য ডিজাইন করে ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের চোখে কে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আলোক বর্ণালী (Light Spectrum) এর ৪০০ থেকে ৪২০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত UV Light (অতি বেগুনি রশ্মি) প্রতিহত করে Anti-Blue লেন্স চোখের সুরক্ষা দেয়। Windows, iOS বা Android অপারেটিং সিস্টেমে Blue-Light Filter/Night Light বা Reading Mode থাকলেও তা আসলে High-quality digital experience-এ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে color distortion করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো মানের Anti-Blue লেন্স ব্যবহার করা উচিত।
কেন অ্যান্টি ব্লু লাইট লেন্স ব্যবহার করা হয়??
নীল আলোর লেন্সগুলি বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে কারণ মানুষ সময় উপযোগী চোখের নীল আলোর প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠেছে। এই লেন্সগুলি কম্পিউটার, ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোনের মতো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে ক্ষতিকারক নীল আলো ফিল্টার করে। এগুলো ব্যবহারের কারণ:
১.চোখের চাপ কমাতে:
দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে নির্গত নীল আলো অনেক সময় চোখে চাপ এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টি-ব্লু লাইট লেন্স এই চাপকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে, এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ডিজিটাল স্ক্রিনগুলি দেখতে আরও আরামদায়ক করে তোলে।
২. চোখের ক্লান্তি রোধ করতে: দীর্ঘ সময়ের জন্য স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে বিভিন্ন ক্লান্তি দেখা দিতে পারে যেমন, মাথাব্যথা, শুষ্ক চোখ, এবং ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এই লেন্স লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম : যারা দিনের বেশির ভাগ সময় ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের সামনে বসে কাজ করেন তারা অ্যান্টি ব্লু লেন্স ব্যবহার না করলে তাদের Circadian Rhythm এবং মেলাটোনিন ক্ষরণ কমে যায়। যার ফলে তাদের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই Circadian Rhythm এবং মেলাটোনিন ক্ষরণ ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। সেজন্যই অ্যান্টি ব্লু লেন্স ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী। এটি মানবদেহের স্লিপিং হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৪. রেটিনাল কোষের সুরক্ষা দেয় :
গবেষণায় দেখা গেছে যে, নীল আলোর দীর্ঘ এক্সপোজার রেটিনার ক্ষতি করে। এই অ্যান্টি-ব্লু লাইট লেন্সগুলি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে ব্লক বা হ্রাস করে রেটিনাল কোষগুলিকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
৫. ফটোফোবিয়া রোধ করে:
ফটোফোবিয়া হল আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা। এটি এমন একটি অবস্থা, ফটোফোবিক ব্যক্তি উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করে। কম্পিউটার, স্মার্টফোনের মতো নীল আলো নির্গত স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এই সংবেদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পায়। আলোর প্রতি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য এটি খুবই উপযুক্ত। কারণ, এটি অন্যান্য দৃশ্যমান আলোর তুলনায় ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং উচ্চ শক্তি রয়েছে এবং এটি চোখের চাপ এবং অস্বস্তি কমায়। নীল আলোকে ব্লক করে বা কমিয়ে, অ্যান্টি-ব্লু লাইট লেন্সগুলি ফটোফোবিয়ার উপসর্গগুলি উপশম করতে সাহায্য করে। এই লেন্সগুলি আলোর প্রতি উচ্চতর সংবেদনশীলতা অনুভব করে এমন ব্যক্তিদের জন্য ভিজ্যুয়াল পরিবেশকে আরও আরামদায়ক করে তোলে, যাতে তারা অস্বস্তি বা চাপ ছাড়াই ডিজিটাল স্ক্রিনের সাথে জড়িত হতে পারে।
অ্যান্টি-ব্লু লেন্সের উপকারিতা:
১. চোখের অস্বস্তি থেকে মুক্তি:
ডিজিটাল ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে সময় ব্যয় করা ক্ষতিকারক এবং এর ফলে কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম হতে পারে। অ্যান্টি-ব্লু লেন্স বা চশমাগুলি আমাদের দৃষ্টি প্রকট করতে এবং চোখের চাপ কমাতে সাহায্য করে। এইভাবে এটি স্বস্তিদায়ক অনুভূতি দিয়ে থাকে।
২. ঘুমের চক্র উন্নত করে:
নীল আলোর বর্ধিত এক্সপোজার ঘুমের ধরণকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। এর কারণ হলো, নীল আলোতে উচ্চ শক্তির ফ্রিকোয়েন্সি আছে যা মনোযোগ বাড়ায় এবং শরীরে মেলাটোনিন নিঃসরণে ব্যাহত করে, যা একজন ব্যক্তিকে ঘুমাতে সাহায্য করে। সাধারণত, ঘুমানোর ১ বা ২ ঘন্টা আগে নীল-আলোে ডিভাইস ব্যবহার এড়াতে হবে। অ্যান্টি-ব্লু লেন্সগুলি নীল আলোর প্রভাব কমাতে পারে, এইভাবে আপনি ঘুমানোর আগে আপনার ডিজিটাল ডিভাইসগুলি ব্যবহার করতে এবং একটি ভাল ঘুম পেতে অনুমতি দেয়। তবুও, বিরক্ত-ঘুমের ধরণ এড়াতে স্বাস্থ্যকর উপায় হল বিছানায় যাওয়ার আগে কয়েক ঘন্টা পর্দা নামিয়ে রাখা।
৩. বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD) এর সম্ভাবনা হ্রাস করে:
AMD অন্ধত্বের প্রধান কারণ। অ্যান্টি-ব্লু লেন্সগুলি চোখকে নীল আলোর প্রভাব থেকে রক্ষা করে বিভিন্ন ব্যাধি এড়াতে বা বিলম্বিত করতে সহায়তা করতে পারে। অ্যান্টি-ব্লু লেন্সগুলি একটি দুর্দান্ত সুরক্ষা প্রযুক্তি যা নীল আলোকে ব্লক করতে এবং চোখের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি কমাতে সহায়তা করতে পারে। তাই একজন চক্ষু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রভাবিত ব্যক্তির এক জোড়া নীল আলো-ব্লকিং লেন্স অত্যন্ত প্রয়োজন।